রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার কুমড়াকান্দি গ্রামের নয়ন শেখ ছিলেন চটপটি বিক্রেতা। প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে চটপটি, ফুচকা বিক্রি করতেন। দিনে স্কুল-কলেজে ঘুরে এসব খাবার বিক্রি শেষে রাতে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসতেন। গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা শেষে বাড়ি ফিরতেন। প্রতিদিন গড়ে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হতো। করোনার কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ায় এসব খাবার বিক্রিও বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি সন্ধ্যার পর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানুষের সমাগম বা জড়ো হওয়া নিষেধ হওয়ায় সেখানেও বসা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে নেমে পড়েছেন রঙ মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে।
আলাপকালে নয়ন বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকে বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ সুযোগে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার বাড়িঘর রঙ করিয়ে নিচ্ছে। তাই বাড়ি বসে না থেকে রঙ মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করছি। দিন শেষে এখন ৪৫০ টাকা করে পাচ্ছি। মাঝেমধ্যে এসব কাজও বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না করলে পরিবারের লোকজন খাবে কী? পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কাজই করতে হবে।’
প্রধান মিস্ত্রি চান মিয়া বলেন, ‘আগে প্রতিদিন এক দলে কাজ করতাম। করোনা শুরুর পর বাড়িঘরে রঙ করার চাহিদা বেড়ে গেছে। এখন আমার পাঁচটি দল বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছি। একেক দলে ৫-৬ জন করে কাজ করছেন। কাজের চাহিদা থাকায় অনেক সহকারীর প্রয়োজন পড়ছে। অনেক তরুণ-যুবক আসছেন সহকারী হিসেবে কাজ করতে।’
গোয়ালন্দ শহরের ঝালমুড়ি বিক্রেতা দুলাল দাসের পরিচিতি সর্বত্র। শহরের প্রতিটি অলিগলি তার পদচারণায় মুখর থাকত। দুলাল দাস করোনার শুরু থেকে ঝালমুড়ি বিক্রি বাদ দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছিল না ঝালমুড়ির চাহিদা। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে সংসার চলবে কীভাবে? এখন মুড়ির ভ্যানে সবজি বিক্রি করছেন।
সবজি বিক্রিকালে দুলাল দাস বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে ছুটে বেড়াতাম। সারাদিন ঝালমুড়ির সাথে বিভিন্ন প্রকারের আচার বিক্রি করতাম। দিন শেষে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, কোনো দিন ১ হাজার টাকাও রোজগার হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন কে ঝালমুড়ি খাবে? মানুষজন এখন বাইরের খাবার তেমন খায় না। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। বাধ্য হয়ে আড়াই মাস ধরে সবজি বিক্রি করছি। এখন দিন শেষে ৪০০ টাকা বা কোনো দিন তার বেশি আয় হয়।’
গোয়ালন্দ বাজারে ভ্যানে লেবু বিক্রি করা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিজের ভ্যান দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে মালামাল বহন করতাম। তাতে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার হতো। এখন বিকাল হলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। আগের মতো ভাড়া পাওয়া যায় না। তাই লেবু পাইকারি দরে কিনে খুচরা বিক্রি করছি। দিন শেষে যা আয় হয় তা দিয়ে মোটামুটি চলছে।’
করোনা পরিস্থিতিতে চটপটি বিক্রেতা নয়ন শেখ, ঝালমুড়ি বিক্রেতা দুলাল দাস বা ভ্যানচালক আব্দুর রাজ্জাকের মতো অনেকে পেটের তাগিতে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের চাওয়া দ্রুত যাতে এ পরিস্থিতির অবসান হয়।